বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১১ অপরাহ্ন
★ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ★ চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি ★ চিকিৎসা যন্ত্রপাতির অভাব ★ অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে চিকিৎসকদের সখ্যতা ★ কর্মকর্তাদের উদাসীনতা
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
খুলনা জেলার রুপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের অব্যবস্থাপনায় রুপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা। অত্র উপজেলায় অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে গোপন অনুমতিতে। এতে করে স্বাস্থ্য সেবা হুমকির মুখে পড়েছে এমনটিই অভিযোগ এলাকাবাসীর।
সরজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায় অত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশ কয়েকটি সিট ভাঙ্গা, বিদ্যুতের সুইচবোর্ড নাই, ফ্যান চলে না, বাথরুমের অবস্থা নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। হাসপাতালে অবস্থানরত বিভিন্ন রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায় রাতের বেলায় নার্সদের ডেকেও পাওয়া যায় না। জরুরী মুহূর্তে ডাক্তার থাকে না। স্যাকমো ডাক্তার দিয়ে কাজ চলে। খাবারের মান ভালো না প্রতিদিন দুপুরে ২:৩০ মিনিটে খাবার দেয়। জরুরি মুহূর্তে অক্সিমিটার মেশিন ও বিপিমেশিন পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে অত্র হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডাক্তার বলেন, নিন্মমানের অক্সিমিটার, বিপিমেশিন সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ মেশিন আমাদেরকে সরবরাহ করা হয়। অত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সরা বলেন, আমরা রাত্র ১ টায় দরজা বন্ধ করে দেই। কেউ এসে ডাকাডাকি করলে তখন ইমারজেন্সি ডাক্তারদের ফোনে অবগত করি। তারা এসে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন; রাতে কোন ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যায়না, স্যাকমো ডাক্তার দিয়ে কাজ চালানো হয়, এমনটি অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাছাড়া অত্র উপজেলায় তিলক কুদির বটতলায় নাসির উদ্দিনের মালিকানায় ‘নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল’ নামে একটি অবৈধ অনিবন্ধিত হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। রুপসা বাগমারায় স্বাস্থ্যসেবা নামে একটি অবৈধ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং কাজদিয়া উপজেলা সদরে আজকের সারাদেশ নামে আরও একটি অবৈধ ক্লিনিক চলছে বহাল তবিয়াতে। রেজিস্ট্রেশন বিহীন প্রাইভেট এ সমস্ত হাসপাতালে ডাক্তার ডিপ্লোমাধারি নার্স কিছুই থাকে না এতে করে স্বাস্থ্য সেবা হুমকির মুখে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে পরিদর্শনের বাইরে রয়ে যায় এ সমস্ত অবৈধ ও প্রশ্নবিদ্ধ বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এমন অভিযোগ করেছেন রুপসা উপজেলার সচেতন মহল। তারা বলেন, অনুমোদনপ্রাপ্ত ক্লিনিক ও সেন্টারগুলোর খবরই নিতে পারে না সরকার। এর মধ্যে ওয়েটিং ফর ইন্সপেকশন এ অবস্থায় চালিয়ে যাচ্ছে, করছে সাধারণ রোগীদের সাথে প্রতারণা। আর এ অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর কোন পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। স্বাস্থ্য সেক্টরের সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে অবৈধ ও প্রশ্নবিদ্ধ সেন্টারগুলো চালু রাখার গোপন অনুমতি দিয়ে থাকেন। রুপসা উপজেলায় এমন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বারবার ঘোষণা দিয়েও কার্যকর অভিযান অব্যাহত রাখতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। বরং স্বাস্থ্য অধিদফতরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধা নিয়ে ওই সব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লালন পালন করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। রূপসায় স্বাস্থ্য সেক্টরের এমন অবস্থা চলার কারণে সেবা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়তই হচ্ছে প্রতারিত। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও পিকিং শিকদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমি কিছুই বলতে পারব না। আপনারা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মাসুদ সাহেব আসলে তার সঙ্গে কথা বলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাসুদ রানার সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। সার্বিক বিষয়ে খুলনা সিভিল সার্জন শফিকুল ইসলাম এর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘এ সমস্ত মেশিন ডিজি অফিস থেকে আমাদের কাছে আসে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স এবং ডাক্তারদের এ ধরনের আচরণ করার কোন সুযোগই নাই। নার্সদের ২৪ ঘন্টা দরজা খোলা রাখতে হবে এবং ডাক্তারদের জরুরী মুহূর্তে অবশ্যই হাসপাতালে থাকতে হবে।’
রুপসা উপজেলায় অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক এর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটী ক্ষমতা নাই। এ সমস্ত অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে চলে আসছে। আমি এ বিষয়ে উপজেলা ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নাই।’ এ বিষয়ে রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোহিনুর জাহান এর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের রদবদল হয়েছে। এ কারণে অভিযান পরিচালনা করতে একটু বিলম্ব হয়েছে। কারণ তাদের পক্ষ থেকে প্রসিকিউটার হয়ে থাকেন। নতুন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এসেছেন আমরা খুব শীঘ্রই তদন্ত-পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
সমাজের বিশিষ্টজনদের মন্তব্য র্যাব সদস্যের অভিযান প্রশংসিত হলেও ঘন ঘন অভিযান চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে রূপসায় এসমস্ত অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি। কোনো ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নেই সরকারী অনুমোদন। ভাড়া করে আনা হয় চিকিৎসক। এমন ফাঁদে পড়ে নানা হয়রানি শিকার হয়ে আসছে অনেক রোগী। সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মনীতির বালাই নেই। হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দ্বারাই চালানো হয় রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরিক্ষা। তারা মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করে ঠকাচ্ছে নিরীহ মানুষকে। একই রোগ পরীক্ষায় একেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ভিন্ন ভিন্ন রিপোর্ট পাওয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে।
রোগী মারার কারখানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ সব সেন্টার থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম বিভ্রান্তিতে পড়েন। নানা সমালোচনার মধ্যেও সরকারী হাসপাতালের একশ্রেণীর ডাক্তারদের সহায়তায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের যথেচ্ছা টেস্টবাণিজ্য চলছে বছরের পর বছর। ডায়াগনস্টিক প্রতারণার শিকার নিরীহ অসহায় রোগী ও স্বজনরা। বার বার অভিযোগ তুলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।
রুপসা অঞ্চলের সচেতন মহল এ সমস্ত ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক এর বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান চালিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ।
জু/হা
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA